বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

কলাবাগানে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু, ফরেনসিকে মেলেনি ধর্ষণের আলামত

কলাবাগানে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু, ফরেনসিকে মেলেনি ধর্ষণের আলামত

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীর মৃত্যু হয় ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে’র কারণে। তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। তবে তাদের দুজনের সম্মতিতে ‘অস্বাভাবিক’ এক ধরনের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। এ কারণেই রক্তক্ষরণ হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে স্কুলছাত্রীর পরিবার দাবি করছে, মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আড়াই মাস পর সম্প্রতি সিআইডি এই প্রতিবেদন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছে। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন ওই বাসায় মেয়েটির সঙ্গে ফারদিন ইফতেখার দিহান ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। ডিএনএ প্রতিবেদনে মেয়েটির শরীরে দিহান ছাড়া কারও স্পর্শের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তাদের দুজনের সম্মতিতে ‘অস্বাভাবিক’ এক ধরনের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। সেই সম্পর্কের সময় মেয়েটার শরীরে ‘বাহ্যিক বস্তু’ ব্যবহার করা হয়। সেটির আঘাতেই শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় মেয়েটির।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার বলেন, কলাবাগানের মামলার যে কাজ আমাদের কাছে ছিল তা আমরা সম্পন্ন করেছি। ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে তা জমা দেওয়া হয়েছে।

স্কুলছাত্রীর মা শাহ নূরী আমিন প্রতিবেদনটি ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, মামলার শুরুতে দ্রুত সব কিছু হচ্ছিল। সবার সহযোগিতাও পাচ্ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে মামলার তদন্তের গতি কমে যায়। সিআইডি ডিএনএ করার নামে দুই মাস অপেক্ষা করায়। তখনই বুঝেছি, ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য এত সব আয়োজন হচ্ছে। আমি এই প্রতিবেদন বিশ্বাস করি না। টাকা দিয়ে তৈরি করা এই প্রতিবেদন।

তিনি আরও বলেন, ওই বাসার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দিহানসহ তার তিন বন্ধু ওই বাসায় ঢুকছে। দিহান হাসপাতালে আমার কাছে স্বীকারও করে- তারা চারজন ওই বাসায় ছিল। তাহলে প্রতিবেদনে সেটা এলো না কেন? পুলিশ কর্মকর্তাদের শুরুর দিকের বক্তব্যেও ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার এই চেষ্টাকে আমরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করব। আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এত সহজে আমি ছেড়ে দেব না।

গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে নিজের বাসায় নিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে দিহানের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পর মেয়েটিকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় দিহান। সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই ছাত্রীর বাবা দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এ মামলায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। আদালতে জবানবন্দিতে দিহান দাবি করে, শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে রক্তক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।

তবে নিহতের মা ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুললে ওই ছাত্রীর ময়নাতদন্তের পর ভিসেরার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অভিযুক্ত দিহানের ডোপ টেস্ট ও ডিএনএর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে সিআইডি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, মরদেহের ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে এসেছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত হয়নি। এই প্রতিবেদনগুলো ছাড়া মামলার অন্যান্য অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করা হচ্ছে।

ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান মো. মাকসুদ বলেন, মৃতের বয়স নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। ভিসেরা প্রতিবেদনও হাতে এসেছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট পুলিশকে জমা দেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877